এসএসসির ফল, কমতে পারে এ প্লাস

সময়ের সন্ধানে ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি:সংগৃহীত

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে ফল প্রকাশের কথা রয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ফলাফল। এবার যে শিক্ষার্থী যে পরিমাণ লিখেছেন তার ওপর ভিত্তি করেই প্রস্তুত করা হয়েছে ফল। এতে করে এবার ‘এ প্লাস’ কিছুটা কমে আসতে পারে বলে আগাম ইঙ্গিত মিলেছে।

জানা গেছে, এবারের এসএসসি ফল কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। কারণ, দীর্ঘদিন পর এবার ‘সহানুভূতির নম্বর’ দেওয়া বন্ধ করে খাতা মূল্যায়নে বাস্তবতার পথে হাঁটছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। ফলাফল নির্ধারণে শিক্ষার্থীর প্রকৃত উত্তরের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখলেই নম্বর পাওয়ার দিন শেষ— এমনটাই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্মকর্তারা।

এসএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সংখ্যার দিক দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের ছবি আঁকা গেলেও গুণগত মান নিয়ে ছিল প্রশ্ন। জিপিএ-৫ পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছেন।

শিক্ষাবোর্ডের একাধিক পরীক্ষক জানান, অতীতে ২৮ বা ৩০ নম্বর পেলেও পরীক্ষার্থীকে ৩৩ করে পাস করিয়ে দেওয়ার অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হতো। এমনকি অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিলেও নম্বর দেওয়ার নজির রয়েছে। তবে এবার সেই ধারায় ছেদ টানা হয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, খাতা মূল্যায়নে আমরা উদার বা কঠোর নই, বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিচ্ছি। বেশি জিপিএ-৫ নয়, বরং ভালো মানের শিক্ষার্থী তুলে আনা আমাদের লক্ষ্য।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, শুধু সংখ্যার নয়, গুণগত মানের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে। তাই শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, বাহুল্য এড়িয়ে, গতি ও নির্ভুলতা বজায় রেখে ফল প্রকাশ হচ্ছে। ফল প্রকাশে অহেতুক জাঁকজমক নয় বরং গুরুত্ব পাচ্ছে স্বচ্ছতা।

এসএসসির ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির এক ভয়াবহ চিত্র। জরিপে দেখা গেছে, ফরম পূরণ করার পরও ৬ হাজার ৩৮৯ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৩৫০ জন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪২ শতাংশ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি বিয়ের কারণে। তাদের ৯৭ শতাংশই ছাত্রী, এবং এদের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা।

জরিপে আরও দেখা যায়, অনুপস্থিতদের মধ্যে ২৫ শতাংশ অসুস্থতা, ১২ শতাংশ প্রস্তুতির অভাব, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বিদেশে চলে যাওয়া, ১ দশমিক ৬ শতাংশ গর্ভধারণ এবং ১ দশমিক ৪ শতাংশ মৃত্যুজনিত কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি। অনুপস্থিতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মানবিক বিভাগ থেকে—৬৮ শতাংশ, যার মধ্যে বড় একটি অংশ মেয়ে এবং গ্রামাঞ্চলের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকেই অনুপস্থিতি দেখে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। কারণ, এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রীদের এই হারে অনুপস্থিত হওয়া আমাদের জন্য বড় অশনি সংকেত। আর জরিপের পর দেখা গেছে বিয়ের কারণে বিপুল সংখ্যক কিশোরীর শিক্ষাজীবন থেমে গিয়েছে। যা আমাদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে।

তিনি বলেন, আবার জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ জানিয়েছে তারা আর পড়বে না, যাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই মেয়ে।  অবশ্য শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এরইমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মেয়েরা বড় হলেই বিয়ে দিতে হবে—এই মানসিকতা এখনও সমাজে গেঁথে আছে। দিনমজুর পরিবারে সন্তান পড়ানো বিলাসিতা মনে করা হয়, তাই মেয়েদের পড়াশোনার বদলে বিয়েকে সমাধান হিসেবে দেখা হয়।

উল্লেখ্য, গত এক দশকের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারে এক প্রকার উলম্ফন দেখা গেছে। ২০০১ সালে প্রথম গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর বছর মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এসএসসির ফল, কমতে পারে এ প্লাস

আপডেট সময় : ১১:৩৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ছবি:সংগৃহীত

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে ফল প্রকাশের কথা রয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ফলাফল। এবার যে শিক্ষার্থী যে পরিমাণ লিখেছেন তার ওপর ভিত্তি করেই প্রস্তুত করা হয়েছে ফল। এতে করে এবার ‘এ প্লাস’ কিছুটা কমে আসতে পারে বলে আগাম ইঙ্গিত মিলেছে।

জানা গেছে, এবারের এসএসসি ফল কিছুটা ব্যতিক্রম হবে। কারণ, দীর্ঘদিন পর এবার ‘সহানুভূতির নম্বর’ দেওয়া বন্ধ করে খাতা মূল্যায়নে বাস্তবতার পথে হাঁটছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। ফলাফল নির্ধারণে শিক্ষার্থীর প্রকৃত উত্তরের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখলেই নম্বর পাওয়ার দিন শেষ— এমনটাই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্মকর্তারা।

এসএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সংখ্যার দিক দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের ছবি আঁকা গেলেও গুণগত মান নিয়ে ছিল প্রশ্ন। জিপিএ-৫ পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছেন।

শিক্ষাবোর্ডের একাধিক পরীক্ষক জানান, অতীতে ২৮ বা ৩০ নম্বর পেলেও পরীক্ষার্থীকে ৩৩ করে পাস করিয়ে দেওয়ার অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হতো। এমনকি অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিলেও নম্বর দেওয়ার নজির রয়েছে। তবে এবার সেই ধারায় ছেদ টানা হয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, খাতা মূল্যায়নে আমরা উদার বা কঠোর নই, বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নের ওপর জোর দিচ্ছি। বেশি জিপিএ-৫ নয়, বরং ভালো মানের শিক্ষার্থী তুলে আনা আমাদের লক্ষ্য।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, শুধু সংখ্যার নয়, গুণগত মানের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে। তাই শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, বাহুল্য এড়িয়ে, গতি ও নির্ভুলতা বজায় রেখে ফল প্রকাশ হচ্ছে। ফল প্রকাশে অহেতুক জাঁকজমক নয় বরং গুরুত্ব পাচ্ছে স্বচ্ছতা।

এসএসসির ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির এক ভয়াবহ চিত্র। জরিপে দেখা গেছে, ফরম পূরণ করার পরও ৬ হাজার ৩৮৯ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৩৫০ জন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪২ শতাংশ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি বিয়ের কারণে। তাদের ৯৭ শতাংশই ছাত্রী, এবং এদের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা।

জরিপে আরও দেখা যায়, অনুপস্থিতদের মধ্যে ২৫ শতাংশ অসুস্থতা, ১২ শতাংশ প্রস্তুতির অভাব, ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বিদেশে চলে যাওয়া, ১ দশমিক ৬ শতাংশ গর্ভধারণ এবং ১ দশমিক ৪ শতাংশ মৃত্যুজনিত কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি। অনুপস্থিতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মানবিক বিভাগ থেকে—৬৮ শতাংশ, যার মধ্যে বড় একটি অংশ মেয়ে এবং গ্রামাঞ্চলের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকেই অনুপস্থিতি দেখে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। কারণ, এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রীদের এই হারে অনুপস্থিত হওয়া আমাদের জন্য বড় অশনি সংকেত। আর জরিপের পর দেখা গেছে বিয়ের কারণে বিপুল সংখ্যক কিশোরীর শিক্ষাজীবন থেমে গিয়েছে। যা আমাদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে।

তিনি বলেন, আবার জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ জানিয়েছে তারা আর পড়বে না, যাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই মেয়ে।  অবশ্য শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে এরইমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মেয়েরা বড় হলেই বিয়ে দিতে হবে—এই মানসিকতা এখনও সমাজে গেঁথে আছে। দিনমজুর পরিবারে সন্তান পড়ানো বিলাসিতা মনে করা হয়, তাই মেয়েদের পড়াশোনার বদলে বিয়েকে সমাধান হিসেবে দেখা হয়।

উল্লেখ্য, গত এক দশকের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারে এক প্রকার উলম্ফন দেখা গেছে। ২০০১ সালে প্রথম গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর বছর মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।