সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদ শিরোনাম ::

গরুর মাংসের সঙ্গে ‘মাশরুম’ খাইয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ তিন অতিথিকে হত্যা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৯:০২:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি:সংগৃহীত

বাড়িতে বেড়াতে আসা শ্বশুর-শাশুড়ি ও খালা শাশুড়িকে গরুর মাংসের সুস্বাদু এক আইটেম খাইয়ে হত্যার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এরিন প্যাটারসন নামে অস্ট্রেলীয় এক নারী। 

সোমবার (৭ জুলাই) অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন। মামলাটি সারা বিশ্বে ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাটি মূলত দুই বছর আগের। এরিন প্যাটারসন নামের ওই গৃহবধূ পারিবারিক এক আয়োজনে দুপুরের খাবার তৈরি করেন। খাওয়ার সময় পরিবেশটা ছিল হাসিঠাট্টায় ভরপুর। কিন্তু, এই খাবার খেয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যান তিনজন অতিথি।

প্যাটারসন দাবি করে আসছিলেন, তিনি গরুর মাংস ও পেস্ট্রি দিয়ে বানানো খাবারে দুর্ঘটনাবশত ‘ডেথ ক্যাপ’ নামের বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে ফেলেছিলেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক মাশরুম হিসেবে পরিচিত।

তবে, ১২ সদস্যের জুরি তিনজনকে হত্যার অভিযোগে আজ সোমবার ৫০ বছর বয়সী প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এ ছাড়া তাকে আরেকজন অতিথিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই অতিথি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

বিশ্বের বহু গণমাধ্যম এ ঘটনাকে ‘মাশরুম খুন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

২০২৩ সালের ২৯ জুলাই নিজের গ্রামের বাড়িতে ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন প্যাটারসন। অতিথি ছিলেন তার স্বামীর বাবা-মা ডন ও গেইল প্যাটারসন, স্বামীর খালা হিদার এবং খালু ইয়ান। এই ইয়ান আবার স্থানীয় ব্যাপটিস্ট গির্জার পাদ্রি ছিলেন।

প্যাটারসন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার স্বামী সায়মনকেও। কিন্তু, তিনি আসেননি। কারণ, প্যাটারসনের সঙ্গে বিবাদ চলার কারণে দাওয়াতে আসতে অস্বস্তিবোধ করছিলেন তিনি। প্যাটারসন ও সায়মন তখনো আইনগত দিক থেকে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তবে, তাদের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে বিবাদ চলছিল তাদের।

প্যাটারসন দামি গরুর মাংস কিনে তাতে মাশরুমের পেস্ট মিশিয়ে পেস্ট্রিতে মোড়ানো একটি খাবার তৈরি করেন—যা বিফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত। সবাই খাওয়ার আগে ও পরে প্রার্থনা করেন। পরে হিদার খাবারটি ‘সুস্বাদু ও দারুণ’ হয়েছে বলে প্রশংসাও করেন।

ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখতে সাধারণ খাওয়ার উপযোগী মাশরুমের মতোই এবং স্বাদেও বেশ মিষ্টি। কিন্তু এতে থাকা অ্যামাটক্সিন নামের বিষ শরীরে ঢুকে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয়।

সেই খাবার খাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ডন, গেইল ও হিদার মারা যান। কিন্তু, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সায়মনের খালু ইয়ান উইলকিনসন। দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হন তিনি।

উইলকিনসন বলেন, সবার খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল ধূসর রঙের চারটি প্লেটে। আর প্যাটারসন নিজের জন্য নিয়েছিলেন ছোট একটি কমলা রঙের প্লেট। তবে উইলকনসিন জানেন না, কেন প্যাটারসন তাকেও মারতে চেয়েছিলেন।

মামলা চলাকালীন প্যাটারসন আদালতের কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত এবং সন্তানদের বিষয়ে পরামর্শ চান—এ কথা বলে তিনি স্বামীর পক্ষের আত্মীয়দের ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, তিনি মোটেই ক্যানসারে আক্রান্ত নন। এটি ছিল তার একটি সাজানো গল্প।

প্যাটারসনের বাড়িতে ফুড ডিহাইড্রেটর (খাবার শুকানোর যন্ত্র) ময়লার স্তূপ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরীক্ষা করে তাতে বিষাক্ত মাশরুমের নমুনা পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনিই নিজেই যন্ত্রটি ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন।

প্যাটারসন আদালতে বলেন, আমি মিথ্যা বলেছিলাম। কারণ, আমার আশঙ্কা ছিল যে আমাকে দায়ী করা হতে পারে।

প্যাটারসনের কম্পিউটার থেকে দেখা যায়, ঘটনার এক বছর আগে কাছাকাছি কোথায় ডেথ ক্যাপ মাশরুম পাওয়া যায়—সে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

গরুর মাংসের সঙ্গে ‘মাশরুম’ খাইয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ তিন অতিথিকে হত্যা!

আপডেট সময় : ০৯:০২:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

ছবি:সংগৃহীত

বাড়িতে বেড়াতে আসা শ্বশুর-শাশুড়ি ও খালা শাশুড়িকে গরুর মাংসের সুস্বাদু এক আইটেম খাইয়ে হত্যার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এরিন প্যাটারসন নামে অস্ট্রেলীয় এক নারী। 

সোমবার (৭ জুলাই) অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন। মামলাটি সারা বিশ্বে ব্যাপক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাটি মূলত দুই বছর আগের। এরিন প্যাটারসন নামের ওই গৃহবধূ পারিবারিক এক আয়োজনে দুপুরের খাবার তৈরি করেন। খাওয়ার সময় পরিবেশটা ছিল হাসিঠাট্টায় ভরপুর। কিন্তু, এই খাবার খেয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যান তিনজন অতিথি।

প্যাটারসন দাবি করে আসছিলেন, তিনি গরুর মাংস ও পেস্ট্রি দিয়ে বানানো খাবারে দুর্ঘটনাবশত ‘ডেথ ক্যাপ’ নামের বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে ফেলেছিলেন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক মাশরুম হিসেবে পরিচিত।

তবে, ১২ সদস্যের জুরি তিনজনকে হত্যার অভিযোগে আজ সোমবার ৫০ বছর বয়সী প্যাটারসনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এ ছাড়া তাকে আরেকজন অতিথিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই অতিথি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

বিশ্বের বহু গণমাধ্যম এ ঘটনাকে ‘মাশরুম খুন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

২০২৩ সালের ২৯ জুলাই নিজের গ্রামের বাড়িতে ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন প্যাটারসন। অতিথি ছিলেন তার স্বামীর বাবা-মা ডন ও গেইল প্যাটারসন, স্বামীর খালা হিদার এবং খালু ইয়ান। এই ইয়ান আবার স্থানীয় ব্যাপটিস্ট গির্জার পাদ্রি ছিলেন।

প্যাটারসন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার স্বামী সায়মনকেও। কিন্তু, তিনি আসেননি। কারণ, প্যাটারসনের সঙ্গে বিবাদ চলার কারণে দাওয়াতে আসতে অস্বস্তিবোধ করছিলেন তিনি। প্যাটারসন ও সায়মন তখনো আইনগত দিক থেকে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তবে, তাদের সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে বিবাদ চলছিল তাদের।

প্যাটারসন দামি গরুর মাংস কিনে তাতে মাশরুমের পেস্ট মিশিয়ে পেস্ট্রিতে মোড়ানো একটি খাবার তৈরি করেন—যা বিফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত। সবাই খাওয়ার আগে ও পরে প্রার্থনা করেন। পরে হিদার খাবারটি ‘সুস্বাদু ও দারুণ’ হয়েছে বলে প্রশংসাও করেন।

ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখতে সাধারণ খাওয়ার উপযোগী মাশরুমের মতোই এবং স্বাদেও বেশ মিষ্টি। কিন্তু এতে থাকা অ্যামাটক্সিন নামের বিষ শরীরে ঢুকে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয়।

সেই খাবার খাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ডন, গেইল ও হিদার মারা যান। কিন্তু, সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সায়মনের খালু ইয়ান উইলকিনসন। দীর্ঘ সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হন তিনি।

উইলকিনসন বলেন, সবার খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল ধূসর রঙের চারটি প্লেটে। আর প্যাটারসন নিজের জন্য নিয়েছিলেন ছোট একটি কমলা রঙের প্লেট। তবে উইলকনসিন জানেন না, কেন প্যাটারসন তাকেও মারতে চেয়েছিলেন।

মামলা চলাকালীন প্যাটারসন আদালতের কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত এবং সন্তানদের বিষয়ে পরামর্শ চান—এ কথা বলে তিনি স্বামীর পক্ষের আত্মীয়দের ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, তিনি মোটেই ক্যানসারে আক্রান্ত নন। এটি ছিল তার একটি সাজানো গল্প।

প্যাটারসনের বাড়িতে ফুড ডিহাইড্রেটর (খাবার শুকানোর যন্ত্র) ময়লার স্তূপ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরীক্ষা করে তাতে বিষাক্ত মাশরুমের নমুনা পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনিই নিজেই যন্ত্রটি ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন।

প্যাটারসন আদালতে বলেন, আমি মিথ্যা বলেছিলাম। কারণ, আমার আশঙ্কা ছিল যে আমাকে দায়ী করা হতে পারে।

প্যাটারসনের কম্পিউটার থেকে দেখা যায়, ঘটনার এক বছর আগে কাছাকাছি কোথায় ডেথ ক্যাপ মাশরুম পাওয়া যায়—সে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলেন তিনি।