সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় বজ্রাপাতে স্কুলছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু, পুরো এলাকা শোকাহত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৩ জনের জাতীয় নাগরিক পার্টির (আহ্বায়ক) নাহিদ ইসলামকে আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত দিনাজপুরে সড়কে পুলিশের গাড়িকে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ভেবে ডাকাতির চেষ্টা,গ্রেপ্তার ২ বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগে, মোস্তাফিজুরকে প্রত্যাহার বরগুনায় নারীকে ধর্ষণে চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড:আদালত গাজীপুরে চার একর জমি, ২০ কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি উদ্ধার, ৫৬ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিজ বাড়িতে সন্তানদের পিটুনিতে,৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুর রহিম হাসপাতালে ভর্তি নারী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন,ব্যাগ টান দিয়ে নারীকেও টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল ছিনতাইকারী আইসিটি ভবন নির্মাণে গড়িমশি – কোটি কোটি টাকা হিসাব ধোঁয়াশার মধ্যে
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় বজ্রাপাতে স্কুলছাত্রসহ চারজনের মৃত্যু, পুরো এলাকা শোকাহত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ৩ জনের জাতীয় নাগরিক পার্টির (আহ্বায়ক) নাহিদ ইসলামকে আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত দিনাজপুরে সড়কে পুলিশের গাড়িকে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস ভেবে ডাকাতির চেষ্টা,গ্রেপ্তার ২ বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগে, মোস্তাফিজুরকে প্রত্যাহার বরগুনায় নারীকে ধর্ষণে চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড:আদালত গাজীপুরে চার একর জমি, ২০ কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি উদ্ধার, ৫৬ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিজ বাড়িতে সন্তানদের পিটুনিতে,৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুর রহিম হাসপাতালে ভর্তি নারী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন,ব্যাগ টান দিয়ে নারীকেও টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেল ছিনতাইকারী আইসিটি ভবন নির্মাণে গড়িমশি – কোটি কোটি টাকা হিসাব ধোঁয়াশার মধ্যে

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

মুক্তির স্বাদ পূর্ণতা পাওয়ার দিন আজ

শাহনেওয়াজ
  • আপডেট সময় : ১১:১৪:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪ ১১৮ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি


সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক খুশবন্ত সিং বলেছিলেন, তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। বিশ্বের অনেক নেতার জীবনী পাঠ করে ভারতের আরেক বিখ্যাত লেখক অমিতাভ ঘোষ বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রয়েছেন এক স্বতন্ত্র অবস্থানে। রয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। সারাজীবন শুধু ত্যাগ স্বীকার করে মানুষকে ভালোবেসে গেছেন’। বঙ্গবন্ধু নিজেও তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর এক স্থানে উল্লেখ করেছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।’

বাঙালি জাতির হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। অধিকার রক্ষার মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে জাতিকে প্রস্তুত করে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণ। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ভয়ংকর বর্বরতায় নেমে পড়ে। পরদিন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু বলেন-‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’

২৫ মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে বন্দি করা হয়। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয় লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগারে বন্দি রাখা হয়। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বাঙালির এই মহান নেতাকে হত্যার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। তবে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপে তাদেরই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়। অন্যদিকে বাংলার মাটিতে পরাজিত এবং আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানি সেনাদের দ্রুত পাকিস্তানে ফেরত নিতে চাইছিল তারা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিকে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সংকট সমাধানের অন্যতম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বজুড়ে প্রবল প্রচার চালান ইন্দিরা গান্ধী। প্রহসনমূলক গোপন বিচারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত করে পাকিস্তানের শাসকরা। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের ২৪ শীর্ষ রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে জরুরি আবেদন পাঠান (মহিউদ্দিন আহমেদ : একাত্তরের মক্তিযুদ্ধ)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাণদ- দিয়ে পরিস্থিতি যেন আরও জটিল করে তোলা না হয়, সে জন্য পাকিস্তানকে শক্ত ভাষায় সতর্ক করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বসহ ব্রিটেন এবং ফ্রান্সও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের প্রধান দেশগুলোর সরকার প্রধানদের কাছে এক বার্তা পাঠান। এমনকি হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ইন্দিরা গান্ধী। বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। কিন্তু সে বৈঠক ব্যর্থ হয়। এরপরও বাংলাদেশ প্রশ্নে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখেন তিনি। ওই আলোচনায় বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে আসে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। লাখো মানুষের আকাশ ফাটা জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনির মধ্যে ঢাকার রেসকোর্সে আত্মসর্মপণ করে পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী। বাংলাদেশ সেদিন পরিপূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত হলেও, বঙ্গবন্ধুর শূন্যতা অনুভব করে। ওইদিন ভারতের লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবরটি জানান।

১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের সরকারের কাছে দুটি সুপারিশ পাঠায়। প্রথমটি হলো বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া, অন্যটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। এদিনই ভুট্টো ঘোষণা করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর। শত্রুমুক্ত ঢাকায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দকে সংবর্ধনা জানানো হয়।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান বিমানবন্দরে শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্য বিদায় জানান ভুটো । এদিন বঙ্গবন্ধু ক্লারিয়জ হোটেলে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দেন। (হারুন হাবিব : আমার দেখা বঙ্গবন্ধু)। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি যখন পাকিস্তানের কারাগারে কনডেম সেলে ফাঁসিতে ঝুলবার অপেক্ষায় ছিলাম, তাদের বলেছি, তোমরা মারলে ক্ষতি নেই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।

লন্ডনে ২৪ ঘণ্টা অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন ৯ জানুয়ারি হিথ্রো থেকে ব্রিটিশ রয়াল ফোর্সের বিশেষ বিমানে ঢাকার পথে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি তিনি দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে (বর্তমানে ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দর) যাত্রা বিরতি করেন। বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। ২১ বার গান স্যালুটের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানানো হয়। উড়ানো হয় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা। বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয়সংগীত।

১০ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যার্বতনের খবরে দেশের লাখো মানুষ আবেগে উৎফুল্ল। সব ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনি উপেক্ষা করে বিপুল মানুষ প্রবেশ করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে। বিমান মাটিতে অবতরণের আগে জানালা দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রাণপ্রিয় সোনার বাংলা দেখেন। যে বাংলাকে রেখে গিয়েছিলেন ২৫ মার্চের রাতে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রায় তিনি পৌঁছান রমনার রেসকোর্সে। যেখানে তিনি ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন।

আবেগ আপ্লুত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে। খেয়ে পরে সুখে থাকবে। এটি ছিল আমার স্বপ্ন । ইয়াহিয়া আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। আমি মানুষ। মুসলমান। তাই বলেছি, ক্ষমা চাই না।

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিন আজ ১০ জানুয়ারি। এদিন মুক্তির স্বাদ পূর্ণতা পাওয়ার দিন। বঙ্গবন্ধু আছেন এ দেশের প্রতিটি মানুষের মণিকোঠায়। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। যেভাবে পিতার আদর্শ ধারণ করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে তিনি সামনে এগিয়ে চলেছেন, বাংলার মানুষ সব অর্থেই বিজয় লাভ করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

মুক্তির স্বাদ পূর্ণতা পাওয়ার দিন আজ

আপডেট সময় : ১১:১৪:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪


সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক খুশবন্ত সিং বলেছিলেন, তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। বিশ্বের অনেক নেতার জীবনী পাঠ করে ভারতের আরেক বিখ্যাত লেখক অমিতাভ ঘোষ বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রয়েছেন এক স্বতন্ত্র অবস্থানে। রয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। সারাজীবন শুধু ত্যাগ স্বীকার করে মানুষকে ভালোবেসে গেছেন’। বঙ্গবন্ধু নিজেও তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর এক স্থানে উল্লেখ করেছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।’

বাঙালি জাতির হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। অধিকার রক্ষার মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে জাতিকে প্রস্তুত করে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণ। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ভয়ংকর বর্বরতায় নেমে পড়ে। পরদিন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু বলেন-‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’

২৫ মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে বন্দি করা হয়। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয় লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগারে বন্দি রাখা হয়। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বাঙালির এই মহান নেতাকে হত্যার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। তবে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপে তাদেরই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়। অন্যদিকে বাংলার মাটিতে পরাজিত এবং আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানি সেনাদের দ্রুত পাকিস্তানে ফেরত নিতে চাইছিল তারা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিকে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সংকট সমাধানের অন্যতম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বজুড়ে প্রবল প্রচার চালান ইন্দিরা গান্ধী। প্রহসনমূলক গোপন বিচারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত করে পাকিস্তানের শাসকরা। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের ২৪ শীর্ষ রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে জরুরি আবেদন পাঠান (মহিউদ্দিন আহমেদ : একাত্তরের মক্তিযুদ্ধ)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাণদ- দিয়ে পরিস্থিতি যেন আরও জটিল করে তোলা না হয়, সে জন্য পাকিস্তানকে শক্ত ভাষায় সতর্ক করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বসহ ব্রিটেন এবং ফ্রান্সও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের প্রধান দেশগুলোর সরকার প্রধানদের কাছে এক বার্তা পাঠান। এমনকি হোয়াইট হাউসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ইন্দিরা গান্ধী। বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। কিন্তু সে বৈঠক ব্যর্থ হয়। এরপরও বাংলাদেশ প্রশ্নে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখেন তিনি। ওই আলোচনায় বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে আসে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। লাখো মানুষের আকাশ ফাটা জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনির মধ্যে ঢাকার রেসকোর্সে আত্মসর্মপণ করে পরাজিত পাকিস্তান বাহিনী। বাংলাদেশ সেদিন পরিপূর্ণভাবে শত্রুমুক্ত হলেও, বঙ্গবন্ধুর শূন্যতা অনুভব করে। ওইদিন ভারতের লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবরটি জানান।

১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের সরকারের কাছে দুটি সুপারিশ পাঠায়। প্রথমটি হলো বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া, অন্যটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। এদিনই ভুট্টো ঘোষণা করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর। শত্রুমুক্ত ঢাকায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দকে সংবর্ধনা জানানো হয়।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তান বিমানবন্দরে শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্য বিদায় জানান ভুটো । এদিন বঙ্গবন্ধু ক্লারিয়জ হোটেলে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দেন। (হারুন হাবিব : আমার দেখা বঙ্গবন্ধু)। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি যখন পাকিস্তানের কারাগারে কনডেম সেলে ফাঁসিতে ঝুলবার অপেক্ষায় ছিলাম, তাদের বলেছি, তোমরা মারলে ক্ষতি নেই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।

লন্ডনে ২৪ ঘণ্টা অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন ৯ জানুয়ারি হিথ্রো থেকে ব্রিটিশ রয়াল ফোর্সের বিশেষ বিমানে ঢাকার পথে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি তিনি দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে (বর্তমানে ইন্দিরা গান্ধী বিমান বন্দর) যাত্রা বিরতি করেন। বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। ২১ বার গান স্যালুটের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানানো হয়। উড়ানো হয় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা। বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয়সংগীত।

১০ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যার্বতনের খবরে দেশের লাখো মানুষ আবেগে উৎফুল্ল। সব ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনি উপেক্ষা করে বিপুল মানুষ প্রবেশ করে তেজগাঁও বিমানবন্দরে। বিমান মাটিতে অবতরণের আগে জানালা দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রাণপ্রিয় সোনার বাংলা দেখেন। যে বাংলাকে রেখে গিয়েছিলেন ২৫ মার্চের রাতে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রায় তিনি পৌঁছান রমনার রেসকোর্সে। যেখানে তিনি ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন।

আবেগ আপ্লুত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে। খেয়ে পরে সুখে থাকবে। এটি ছিল আমার স্বপ্ন । ইয়াহিয়া আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। আমি মানুষ। মুসলমান। তাই বলেছি, ক্ষমা চাই না।

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিন আজ ১০ জানুয়ারি। এদিন মুক্তির স্বাদ পূর্ণতা পাওয়ার দিন। বঙ্গবন্ধু আছেন এ দেশের প্রতিটি মানুষের মণিকোঠায়। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। যেভাবে পিতার আদর্শ ধারণ করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে তিনি সামনে এগিয়ে চলেছেন, বাংলার মানুষ সব অর্থেই বিজয় লাভ করবে।