দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কি পরমাণু অস্ত্র থেকে মুখ ফেরাতে পারবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৬:০০:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি :সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা।

তারা বলছেন, প্রায় এক দশকেরও বেশি পুরনো এসইএএনডবলিউএফজি চুক্তি (সাউথ ইস্ট এশিয়া নিউক্লিয়ার উইপন ফ্রি জোন ট্রিটি) নিয়ে আলোচনা করার সময় এসেছে। ১৯৯৫ সালে এসইএএনডবলিউএফজি চুক্তিটি তৈরি করে আসিয়ান। এই চুক্তির মূল উপজীব্য, কোনও দেশে সাধারণ মানুষের উন্নতির স্বার্থে পরমাণু শক্তির ব্যবহার করা। পাশাপাশি, দেশটিকে পারমাণবিক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ধ্বংসলীলা থেকে মুক্ত রাখা।

এক কথায়, যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা। সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে আসিয়ানের বৈঠকে সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি দেশ মালয়েশিয়া পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির কাছে পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আবারও তুলে ধরে।

আবেদন জানায়, এই বিষয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই আসিয়ান চীন, আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের কাছে এই চুক্তিতে সই করার আবেদন জানিয়ে এসেছে।

সাম্প্রতিক বৈঠকের পরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ হাসানের দাবি, চীন জানিয়েছে তারা এই চুক্তিতে সই করতে রাজি আছে। যদিও কূটনীতিকদের দাবি, চীনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে কোনও কূটনৈতিক পরিকল্পনা।

হাসানের দাবি, রাশিয়াও এই চুক্তিতে সই করতে রাজি হয়েছে। যদিও মস্কোর পক্ষ থেকে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। আসিয়ানের সাম্প্রতিক এই বৈঠকের সময় আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো কুয়ালালামপুরে ছিলেন। একাধিক বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেন তিনি। তবে, আমেরিকা এই চুক্তিতে সই করতে রাজি কি না, সেই বিষয়টি এখনও বেশ অস্পষ্ট।

প্রসঙ্গত, ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতকরণ নজর দিয়েছে।

কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাম্প্রতিক মন্তব্য মনে ধরেছে এই দেশগুলির। লাভরভ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহু মেরুকরণ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। ফলে, আমেরিকার বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ও শুল্ক চাপানোর বিষয়টিকে নিজেদের সুযোগ হিসেবে দেখছে চীন, বিস্তার করছে নিজেদের কূটনৈতিক প্রভাব।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গবেষক জশোয়া কারল্যান্টজিক জানান, আমেরিকা যখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উপর শুল্ক চাপাচ্ছে এবং চেষ্টা করছে চীনের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে, চীন তখন দেখাতে চাইছে যে সে আসিয়ানকে কতটা গুরুত্ব দেয়।

তিনি আরও বলেন, চীন জানে তার হারানোর কিছু নেই, কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব কম।

তবে চীনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক জাকারি আবুজা। তার দাবি, সই করলেও একেবারেই এই চুক্তি মানবে না শি জিনপিংয়ের দেশ।

চুক্তি অনুসারে, যে দেশ এতে সই করে তারা নিজেদের দেশ ও জলসীমার মধ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। এ দিকে, গত বছরই মার্কিন সেনারা দাবি করেছিল যে দক্ষিণ চীন সাগরে পরমাণু রিয়্যাক্টর বিস্তারের চেষ্টা করছে চীন।

পেন্টাগনের দাবি, চীনের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

অধ্যাপক আবুজার মতে, বৃহত্তর এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কূটনীতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা প্রয়োজন আসিয়ানের। সেই প্রেক্ষিতেই চীনের এই চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্তটি কূটনৈতিকভাবে বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে চীন। দেখাতে চাইছে, এখানকার নিয়ম ও রীতির প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ওয়াশিংটনকে টেক্কা দেওয়া। চীন আসলে দেখাতে চায়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছে আমেরিকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কি পরমাণু অস্ত্র থেকে মুখ ফেরাতে পারবে

আপডেট সময় : ০৬:০০:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

ছবি :সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা।

তারা বলছেন, প্রায় এক দশকেরও বেশি পুরনো এসইএএনডবলিউএফজি চুক্তি (সাউথ ইস্ট এশিয়া নিউক্লিয়ার উইপন ফ্রি জোন ট্রিটি) নিয়ে আলোচনা করার সময় এসেছে। ১৯৯৫ সালে এসইএএনডবলিউএফজি চুক্তিটি তৈরি করে আসিয়ান। এই চুক্তির মূল উপজীব্য, কোনও দেশে সাধারণ মানুষের উন্নতির স্বার্থে পরমাণু শক্তির ব্যবহার করা। পাশাপাশি, দেশটিকে পারমাণবিক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ধ্বংসলীলা থেকে মুক্ত রাখা।

এক কথায়, যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা। সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে আসিয়ানের বৈঠকে সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি দেশ মালয়েশিয়া পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির কাছে পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আবারও তুলে ধরে।

আবেদন জানায়, এই বিষয়ে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই আসিয়ান চীন, আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের কাছে এই চুক্তিতে সই করার আবেদন জানিয়ে এসেছে।

সাম্প্রতিক বৈঠকের পরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ হাসানের দাবি, চীন জানিয়েছে তারা এই চুক্তিতে সই করতে রাজি আছে। যদিও কূটনীতিকদের দাবি, চীনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে কোনও কূটনৈতিক পরিকল্পনা।

হাসানের দাবি, রাশিয়াও এই চুক্তিতে সই করতে রাজি হয়েছে। যদিও মস্কোর পক্ষ থেকে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। আসিয়ানের সাম্প্রতিক এই বৈঠকের সময় আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো কুয়ালালামপুরে ছিলেন। একাধিক বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দেন তিনি। তবে, আমেরিকা এই চুক্তিতে সই করতে রাজি কি না, সেই বিষয়টি এখনও বেশ অস্পষ্ট।

প্রসঙ্গত, ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবর্তনশীল কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতকরণ নজর দিয়েছে।

কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাম্প্রতিক মন্তব্য মনে ধরেছে এই দেশগুলির। লাভরভ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহু মেরুকরণ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। ফলে, আমেরিকার বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ও শুল্ক চাপানোর বিষয়টিকে নিজেদের সুযোগ হিসেবে দেখছে চীন, বিস্তার করছে নিজেদের কূটনৈতিক প্রভাব।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গবেষক জশোয়া কারল্যান্টজিক জানান, আমেরিকা যখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উপর শুল্ক চাপাচ্ছে এবং চেষ্টা করছে চীনের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে, চীন তখন দেখাতে চাইছে যে সে আসিয়ানকে কতটা গুরুত্ব দেয়।

তিনি আরও বলেন, চীন জানে তার হারানোর কিছু নেই, কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব কম।

তবে চীনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক জাকারি আবুজা। তার দাবি, সই করলেও একেবারেই এই চুক্তি মানবে না শি জিনপিংয়ের দেশ।

চুক্তি অনুসারে, যে দেশ এতে সই করে তারা নিজেদের দেশ ও জলসীমার মধ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। এ দিকে, গত বছরই মার্কিন সেনারা দাবি করেছিল যে দক্ষিণ চীন সাগরে পরমাণু রিয়্যাক্টর বিস্তারের চেষ্টা করছে চীন।

পেন্টাগনের দাবি, চীনের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

অধ্যাপক আবুজার মতে, বৃহত্তর এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কূটনীতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা প্রয়োজন আসিয়ানের। সেই প্রেক্ষিতেই চীনের এই চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্তটি কূটনৈতিকভাবে বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে চীন। দেখাতে চাইছে, এখানকার নিয়ম ও রীতির প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মূল উদ্দেশ্য কিন্তু ওয়াশিংটনকে টেক্কা দেওয়া। চীন আসলে দেখাতে চায়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি ও আঞ্চলিক স্থিতাবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছে আমেরিকা।