সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদ শিরোনাম ::

ঐকমত্য কমিশনে জাতীয় দল ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তেজনা

সময়ের সন্ধানে ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৯:২২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ২৩তম দিনের সংলাপে আজ উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে জাতীয় দল ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। অবশ্য পরে এক নেতা দুঃখিত বলায় পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতির আগে সভাস্থলে কিছু সময় বিতর্ক চলে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে পড়েন নেতারা।সভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চান না। উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিদের অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না।’

তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘ভোটের সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে, সেটি তো জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়।’ তিনি এ বিষয়ে সালাহউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সালাহউদ্দিন একটি ব্যাখ্যা দেন।

এ সময় জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়া জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’ তখনই জাবেদ রাসিন তার প্রতিবাদ করেন (মাইক ছাড়া) এবং সঙ্গে সঙ্গে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। তাদের দুজনকেই তখন মাইক ছাড়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

তখন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ আজ যদি তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও তিনি প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।’

এরপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তিনি (হুদা) এই কথা বলতেই পারেন না।’ এ সময় সালাহউদ্দিন তার পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন।

আখতার তখন বলতে থাকেন, ‘আমরা বাচ্চাকাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি।’ এ সময় আলী রীয়াজ বলেন, ‘কারও লোকাস স্ট্যান্ডিং নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার নেই। প্রত্যেকের লোকাস স্ট্যান্ডিং আছে বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’

তখন আখতার বলেন, ‘গায়ের জোরে এসব প্রশ্ন করলে তো আমরা মানব না।’ আলী রীয়াজ তখন বলেন, ‘আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।’

আখতার তখন আবার বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে আমরা গণ-অভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে এসেছিল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য তার (হুদার) ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ এ সময় সালাহউদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা হুদা ভাই, আপনি স্যরি বলেন।’

এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী এ বিষয়ে কথা বলতে উঠে দাঁড়ালে, আলী রীয়াজ তাকে অনুরোধ করে বসিয়ে দেন। সাকী কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেও মাইক ছাড়া তা শোনা যায়নি। পরে সালাহউদ্দিন হুদাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে, তার জন্য স্যরি বলেন।’

তখন এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল। তার পরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।’

এরপরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঘোষণা দেন। বিরতির সময় হুদাকে আবার আখতারের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তার সাথে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তখন হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার অনুরোধ, আমরা এটা নিয়ে আর সিনক্রিয়েট না করি। আমার আপনাদের নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো ইনটেনশন ছিল না।’

পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার এটা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি।’ পরে আখতার হোসেন হুদাকে জাবেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঐকমত্য কমিশনে জাতীয় দল ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তেজনা

আপডেট সময় : ০৯:২২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ২৩তম দিনের সংলাপে আজ উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে জাতীয় দল ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। অবশ্য পরে এক নেতা দুঃখিত বলায় পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতির আগে সভাস্থলে কিছু সময় বিতর্ক চলে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে পড়েন নেতারা।সভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা উচ্চকক্ষের হাতে দিতে চান না। উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিদের অনির্বাচিত আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা থাকে না।’

তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘ভোটের সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে, সেটি তো জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়।’ তিনি এ বিষয়ে সালাহউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সালাহউদ্দিন একটি ব্যাখ্যা দেন।

এ সময় জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এবং ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়া জাবেদ রাসিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’ তখনই জাবেদ রাসিন তার প্রতিবাদ করেন (মাইক ছাড়া) এবং সঙ্গে সঙ্গে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। তাদের দুজনকেই তখন মাইক ছাড়া পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

তখন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি, সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ আজ যদি তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমাকেও তিনি প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।’

এরপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তিনি (হুদা) এই কথা বলতেই পারেন না।’ এ সময় সালাহউদ্দিন তার পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন।

আখতার তখন বলতে থাকেন, ‘আমরা বাচ্চাকাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি।’ এ সময় আলী রীয়াজ বলেন, ‘কারও লোকাস স্ট্যান্ডিং নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার নেই। প্রত্যেকের লোকাস স্ট্যান্ডিং আছে বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’

তখন আখতার বলেন, ‘গায়ের জোরে এসব প্রশ্ন করলে তো আমরা মানব না।’ আলী রীয়াজ তখন বলেন, ‘আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।’

আখতার তখন আবার বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে আমরা গণ-অভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে এসেছিল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য তার (হুদার) ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ এ সময় সালাহউদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা হুদা ভাই, আপনি স্যরি বলেন।’

এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী এ বিষয়ে কথা বলতে উঠে দাঁড়ালে, আলী রীয়াজ তাকে অনুরোধ করে বসিয়ে দেন। সাকী কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেও মাইক ছাড়া তা শোনা যায়নি। পরে সালাহউদ্দিন হুদাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে, তার জন্য স্যরি বলেন।’

তখন এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল। তার পরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।’

এরপরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঘোষণা দেন। বিরতির সময় হুদাকে আবার আখতারের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তার সাথে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তখন হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার অনুরোধ, আমরা এটা নিয়ে আর সিনক্রিয়েট না করি। আমার আপনাদের নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো ইনটেনশন ছিল না।’

পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার এটা নিয়ে প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি।’ পরে আখতার হোসেন হুদাকে জাবেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন।