সংবাদ শিরোনাম ::
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যে নতুন তথ্য দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর কৃষকের কামড়ে প্রাণ গেল সাপে জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকবে না: নাহিদ ইসলাম জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাবে যা বললেন মির্জা ফখরুল ‘নতুন নেতৃত্ব, নতুন বাংলাদেশ’ স্লোগানে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: জামায়াত আমির বিশ্ববিদ্যালয়ে গাঁজা-মদ বন্ধ হয়েছে, ডালের ঘনত্ব বেড়েছে: তাহের সেতু থেকে তরুণীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা, এরপর যা হলো  হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে শাহজালালের পোড়া কার্গো কমপ্লেক্স থেকে এবার মোবাইল চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত শ্রীপুরে যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা
সংবাদ শিরোনাম ::
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যে নতুন তথ্য দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর কৃষকের কামড়ে প্রাণ গেল সাপে জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকবে না: নাহিদ ইসলাম জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাবে যা বললেন মির্জা ফখরুল ‘নতুন নেতৃত্ব, নতুন বাংলাদেশ’ স্লোগানে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: জামায়াত আমির বিশ্ববিদ্যালয়ে গাঁজা-মদ বন্ধ হয়েছে, ডালের ঘনত্ব বেড়েছে: তাহের সেতু থেকে তরুণীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা, এরপর যা হলো  হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে শাহজালালের পোড়া কার্গো কমপ্লেক্স থেকে এবার মোবাইল চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত শ্রীপুরে যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেফ এক্সিট কারা নিয়েছিলেন?

সময়ের সন্ধানে প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ৮০ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি:সংগৃহীত

গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সেফ এক্সিট নিয়ে রাজনীতির ময়দানে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছে। মূলত একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথাও ভাবছেন। তার এই মন্তব্য প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক আলোচনার ঝড়।

 

এ নিয়ে সাংবাদিকরাও নিয়মিতভাবেই সংবাদ সম্মেলন কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করছেন উপদেষ্টাদের। তাদের দিক থেকেও আসছে নানা ধরনের জবাব।

 

এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম পাল্টা মন্তব্য করেন কোথায় সেফ এক্সিট নেবে? পৃথিবীতে সেফ এক্সিট নেওয়ার একটাই জায়গা, সেটা হলো মৃত্যু। নাহিদের বক্তব্যের পরই গত সপ্তাহে তার এই মন্তব্য আসে।

 

গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সমাবেশে গিয়ে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, সেফ এক্সিটের ব্যাপারে কী বলবো ভাই? প্রত্যেকটা উপদেষ্টাই বিদেশি নাগরিক।

 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। একইসাথে উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট নিতে চায় এ বিষয়গুলো নাহিদ ইসলামকেই পরিস্কার করতে হবে।

 

এ নিয়ে আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারো কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নাই।

 

নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন আমি মনে করছি না যে আমাদের এক্সিটের কোনো সংকট আছে।

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছেলেমেয়ে সবাই দেশে থাকায় একা গিয়ে কী করবো।

 

অন্য উপদেষ্টাদের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নিজের ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব নেওয়া, তারাই আবার অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা করে।

 

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিষয়টি এখন আলোচনায় উঠে আসলেও বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে অন্তত তিনবার সেফ এক্সিটের ঘটনা ঘটেছে।

 

সেফ এক্সিট কী?

 

সাধারণভাবে সেফ এক্সিট বলতে কোনো স্থান থেকে নিরাপদে প্রস্থান বা চলে যাওয়াকে বোঝায়। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে বিষয়টা আরেকটু জটিল।

 

রাজনীতিতে সেফ এক্সিট বলতে জটিল কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বোঝায় যখন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার বাইরে রেখে নিরাপদে প্রস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়।

 

সেফ এক্সিট কথাটা এভাবে আলোচনায় প্রথমবারের মতো এলেও ১৯৭৫ সাল, ২০০৯ সাল এবং ২০২৪ সালে –রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তত তিনবার বাংলাদেশে সেফ এক্সিটের ঘটনা ঘটেছে।

 

এক-এগারোর সরকার

এক্সিট শব্দটি প্রথম আলাপে এসেছিল ২০০৭ সালে দায়িত্ব নেওয়া এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সময় আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় রাজনীতিবিদদের অনেককে।

 

তবে শেষ অব্দি পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া শুরু করে তৎকালীন সরকার। সব হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় ক্ষমতা ছাড়ার আগ দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে পড়েন সরকারের শীর্ষ পদধারীরা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘এক-এগারো’ বইতে লিখেছেন, এ সময় ক্ষমতা ছেড়ে কীভাবে তারা নিরাপদে বেরিয়ে যাবে তার এক্সিট প্ল্যান নিয়ে আলোচনায় বসে দুই শীর্ষ দলের সাথে।

 

বিবিসি বাংলাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন,  এক-এগারোর কুশীলবরা একটা সেফ এক্সিটের জন্য ধর্না দিয়েছিল শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার কাছে। খালেদা জিয়া দেন নাই, সেটা হাসিনা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার করার কারণে শেখ হাসিনা কিছুটা ‘গোসা’ করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে থাকা গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের কোনো ধরনের জবাবদিহিতার আওতায় না এনে ক্ষমতা ছাড়ার সমঝোতা করা হয়।

 

তিনি জানান, সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের নিয়ে ২০০৮ সালের অক্টোবরে এক বৈঠক হয়। সেখানে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, গওহর রিজভীসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেকে সেখানে ছিলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে ফখরুদ্দীন আহমদ নিউইয়র্কে অবস্থান করায় টেলিফোনে যুক্ত হোন, সেখানে এক্সিটের প্ল্যান চূড়ান্ত হয়।

 

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে দেশত্যাগ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ।

 

১৯৭৫ সাল

তবে বিশ্লেষকদের মতে, সেফ এক্সিট দেওয়ার প্রথম ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটে ১৯৭৫ সালে। পরিবারের ১৮জন সদস্যসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের রক্ষার জন্য ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক হিসেবে ও বিদেশি মিশনের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মূলত অপরাধ করার পরও বিচারের আওতায় না এনে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রথম উদাহরণ এটিই।

 

ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা এলে প্রথমবারের মতো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

 

৫ই অগাস্ট, ২০২৪

সেফ এক্সিটের শেষ ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়েন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে দেশ থেকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়।

 

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, তিনি তো প্রাণে বাঁচলেন, সেই সেন্সে সেফ এক্সিট। কারণ তিনি তো খুব গোপনে পালান নাই। আমাদের এখানে সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আমাদের সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে তাকে ভারতে রেখে আসা হয়েছে।

 

এছাড়াও টালমাটাল পরিস্থিতিতে ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তারেক রহমান। সেই যাওয়াকেও কি সেফ এক্সিট বলা যায়?

 

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আর কখনো রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে তার দেশ ছাড়ার ব্যাপারে সমঝোতা করা হয়েছিল। তার মা খালেদা জিয়াও এই বিষয়ে জানতেন। নিজের নিরাপত্তা নিলেও ওই অর্থে এটাকে ঠিক সেফ এক্সিট বলা যাবে না।

 

সেফ এক্সিট কেন দেওয়া হয়?

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত জটিল পরিস্থিতি আরও জটিল যেন না হয় এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানো যায় – তাই সমঝোতার মাধ্যমে সেফ এক্সিটের দিকে আগানো হয়। আর এর মাধ্যমে সাধারণত দুই পক্ষই লাভজনক অবস্থানে থাকে।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, চলে গেলে সেও নিরাপদ থাকলো, আমরাও ঝামেলামুক্ত থাকলাম। ব্যাপারটা এই রকম যে একজন দুর্বৃত্ত, একজন গণশত্রু পালালেন, কিন্তু তাকে সাহায্য করা হলো পালাতে। যারা এই সাহায্য করলেন তারাও একই গোয়ালের গরু।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেফ এক্সিট কারা নিয়েছিলেন?

আপডেট সময় : ০৮:৩০:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ছবি:সংগৃহীত

গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সেফ এক্সিট নিয়ে রাজনীতির ময়দানে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলছে। মূলত একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথাও ভাবছেন। তার এই মন্তব্য প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক আলোচনার ঝড়।

 

এ নিয়ে সাংবাদিকরাও নিয়মিতভাবেই সংবাদ সম্মেলন কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করছেন উপদেষ্টাদের। তাদের দিক থেকেও আসছে নানা ধরনের জবাব।

 

এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম পাল্টা মন্তব্য করেন কোথায় সেফ এক্সিট নেবে? পৃথিবীতে সেফ এক্সিট নেওয়ার একটাই জায়গা, সেটা হলো মৃত্যু। নাহিদের বক্তব্যের পরই গত সপ্তাহে তার এই মন্তব্য আসে।

 

গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সমাবেশে গিয়ে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, সেফ এক্সিটের ব্যাপারে কী বলবো ভাই? প্রত্যেকটা উপদেষ্টাই বিদেশি নাগরিক।

 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। একইসাথে উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট নিতে চায় এ বিষয়গুলো নাহিদ ইসলামকেই পরিস্কার করতে হবে।

 

এ নিয়ে আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি, আমাদের কারো কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নাই।

 

নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন আমি মনে করছি না যে আমাদের এক্সিটের কোনো সংকট আছে।

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছেলেমেয়ে সবাই দেশে থাকায় একা গিয়ে কী করবো।

 

অন্য উপদেষ্টাদের চেয়ে খানিকটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নিজের ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব নেওয়া, তারাই আবার অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা করে।

 

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিষয়টি এখন আলোচনায় উঠে আসলেও বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে অন্তত তিনবার সেফ এক্সিটের ঘটনা ঘটেছে।

 

সেফ এক্সিট কী?

 

সাধারণভাবে সেফ এক্সিট বলতে কোনো স্থান থেকে নিরাপদে প্রস্থান বা চলে যাওয়াকে বোঝায়। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে বিষয়টা আরেকটু জটিল।

 

রাজনীতিতে সেফ এক্সিট বলতে জটিল কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বোঝায় যখন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার বাইরে রেখে নিরাপদে প্রস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়।

 

সেফ এক্সিট কথাটা এভাবে আলোচনায় প্রথমবারের মতো এলেও ১৯৭৫ সাল, ২০০৯ সাল এবং ২০২৪ সালে –রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তত তিনবার বাংলাদেশে সেফ এক্সিটের ঘটনা ঘটেছে।

 

এক-এগারোর সরকার

এক্সিট শব্দটি প্রথম আলাপে এসেছিল ২০০৭ সালে দায়িত্ব নেওয়া এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সময় আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় রাজনীতিবিদদের অনেককে।

 

তবে শেষ অব্দি পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাওয়া শুরু করে তৎকালীন সরকার। সব হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় ক্ষমতা ছাড়ার আগ দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে পড়েন সরকারের শীর্ষ পদধারীরা।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘এক-এগারো’ বইতে লিখেছেন, এ সময় ক্ষমতা ছেড়ে কীভাবে তারা নিরাপদে বেরিয়ে যাবে তার এক্সিট প্ল্যান নিয়ে আলোচনায় বসে দুই শীর্ষ দলের সাথে।

 

বিবিসি বাংলাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন,  এক-এগারোর কুশীলবরা একটা সেফ এক্সিটের জন্য ধর্না দিয়েছিল শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার কাছে। খালেদা জিয়া দেন নাই, সেটা হাসিনা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার করার কারণে শেখ হাসিনা কিছুটা ‘গোসা’ করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে থাকা গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের কোনো ধরনের জবাবদিহিতার আওতায় না এনে ক্ষমতা ছাড়ার সমঝোতা করা হয়।

 

তিনি জানান, সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের নিয়ে ২০০৮ সালের অক্টোবরে এক বৈঠক হয়। সেখানে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, গওহর রিজভীসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেকে সেখানে ছিলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে ফখরুদ্দীন আহমদ নিউইয়র্কে অবস্থান করায় টেলিফোনে যুক্ত হোন, সেখানে এক্সিটের প্ল্যান চূড়ান্ত হয়।

 

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে দেশত্যাগ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ।

 

১৯৭৫ সাল

তবে বিশ্লেষকদের মতে, সেফ এক্সিট দেওয়ার প্রথম ঘটনাটি বাংলাদেশে ঘটে ১৯৭৫ সালে। পরিবারের ১৮জন সদস্যসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের রক্ষার জন্য ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক হিসেবে ও বিদেশি মিশনের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মূলত অপরাধ করার পরও বিচারের আওতায় না এনে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রথম উদাহরণ এটিই।

 

ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা এলে প্রথমবারের মতো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

 

৫ই অগাস্ট, ২০২৪

সেফ এক্সিটের শেষ ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়েন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে দেশ থেকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়।

 

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, তিনি তো প্রাণে বাঁচলেন, সেই সেন্সে সেফ এক্সিট। কারণ তিনি তো খুব গোপনে পালান নাই। আমাদের এখানে সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আমাদের সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে তাকে ভারতে রেখে আসা হয়েছে।

 

এছাড়াও টালমাটাল পরিস্থিতিতে ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তারেক রহমান। সেই যাওয়াকেও কি সেফ এক্সিট বলা যায়?

 

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আর কখনো রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে তার দেশ ছাড়ার ব্যাপারে সমঝোতা করা হয়েছিল। তার মা খালেদা জিয়াও এই বিষয়ে জানতেন। নিজের নিরাপত্তা নিলেও ওই অর্থে এটাকে ঠিক সেফ এক্সিট বলা যাবে না।

 

সেফ এক্সিট কেন দেওয়া হয়?

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত জটিল পরিস্থিতি আরও জটিল যেন না হয় এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানো যায় – তাই সমঝোতার মাধ্যমে সেফ এক্সিটের দিকে আগানো হয়। আর এর মাধ্যমে সাধারণত দুই পক্ষই লাভজনক অবস্থানে থাকে।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, চলে গেলে সেও নিরাপদ থাকলো, আমরাও ঝামেলামুক্ত থাকলাম। ব্যাপারটা এই রকম যে একজন দুর্বৃত্ত, একজন গণশত্রু পালালেন, কিন্তু তাকে সাহায্য করা হলো পালাতে। যারা এই সাহায্য করলেন তারাও একই গোয়ালের গরু।