বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ৩২ আহত ১৬৫ জন

- আপডেট সময় : ০৮:৪৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫ ৫৬ বার পড়া হয়েছে

ছবি:সংগৃহীত
রাজধানী উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩২ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২১ জুলাই ২০২৫ আনুমানিক দুপুর ১টা ১২ মিনিট থেকে ১টা ১৪ মিনিটের মধ্যে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিয়াবাড়ি স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি দোতলা ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণরত অবস্থায় বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ১টায় স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় তখন অভিভাবকদের জন্য শুধু স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী অপেক্ষারত অবস্থায় ছিল। এ সময়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এতে বলা হয়, ঘটনার আকস্মিতায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে মুহূর্তের মধ্যে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও এলাকাবাসী উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের প্রশিক্ষিত জনবল সম্মিলিতভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন। আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমাদের স্কুল শাখার ১৮ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক, ২ জন অভিভাবক মৃত্যুবরণ করেছেন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হন ৫১ জন। এদের মধ্যে ৪০ শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ১ জন অভিভাবক, ১ জন আয়া ও ১ জন পিয়ন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন, যাদের মধ্যে ৩ জন শিক্ষার্থী ও ২ জন অভিভাবক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় ২২ জুলাই ২০২৫ এ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু এ প্রতিষ্ঠানে নিহত, আহত ও নিখোঁজের তথ্য তুলে ধরছে। কর্তৃপক্ষের তথ্য হালনাগাদকরণের কাজ চলমান। এই দুঃখজনক ঘটনায় হতাহতের সর্বমোট সংখ্যা তুলে ধরছে আইএসপিআর। হৃদয়বিদারক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের প্রতি আমরা গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আহতদের চিকিৎসাসহ সকল প্রয়োজনে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ সবর্দা পাশে রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, আমাদের শিক্ষার্থী ও সন্তান হারানোর এই চরম শোকসন্তপ্ত অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টাবৃন্দ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট, অভিভাবকবৃন্দ, এলাকাবাসীসহ পুরো জাতি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রত্যেকেই তাদের অবস্থান থেকে সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গুরুতরভাবে আহতদের উন্নত ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এ ব্যাপারে চিকিৎসা ও সেবাকার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি জরুরি সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনার প্রথম থেকে এ পর্যন্ত উদ্ধার, যোগাযোগ, সেবা, চিকিৎসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা মানবিকতার হাত বাড়িয়েছেন সেসকল ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সকল গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি, যারা মর্মান্তিক এই ঘটনাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সকলের দৃষ্টিগোচর করেছেন।
উল্লেখ্য, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। এ ছাড়া এখনো ১৬৫ জন আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানানো হয়েছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানে বর্তমানে ৪৫ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সিএমএইচ-এ মৃত্যু হয়েছে আরও ৯ জনের, যেখানে ১৫ জন এখনও ভর্তি আছেন। প্রেস উইং অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় মোট ২৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন ৯টি হাসপাতালে দগ্ধ অবস্থায় আরও ৫৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।