সংবাদ শিরোনাম ::
এক্সপ্রেসওয়েতে গরুবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষ, নিহত ১ আরাফার দিন রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন গরুর নাম পরীমণি,শাকিব,ট্রাম্প, লায়লা ও মামুন, দাম যত হাঁকছেন বিক্রেতা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে এক নারীকে লাথি মেরে বহিষ্কৃত জামায়াতের কর্মীর: জামিন চলন্ত বাস থেকে ফেলে যাত্রীকে হত্যার অভিযোগ পিরোজপুরে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী অনশন আত্মহত্যার হুঁশিয়ারি সারাদেশ থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহনে ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় গরু চুরির হিড়িক গরুর ট্রাক-ট্রলারে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি: র‌্যাব কোরবানির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের গরু প্রয়োজন নেই: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
সংবাদ শিরোনাম ::
এক্সপ্রেসওয়েতে গরুবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষ, নিহত ১ আরাফার দিন রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন গরুর নাম পরীমণি,শাকিব,ট্রাম্প, লায়লা ও মামুন, দাম যত হাঁকছেন বিক্রেতা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে এক নারীকে লাথি মেরে বহিষ্কৃত জামায়াতের কর্মীর: জামিন চলন্ত বাস থেকে ফেলে যাত্রীকে হত্যার অভিযোগ পিরোজপুরে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে তরুণী অনশন আত্মহত্যার হুঁশিয়ারি সারাদেশ থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহনে ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় গরু চুরির হিড়িক গরুর ট্রাক-ট্রলারে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি: র‌্যাব কোরবানির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের গরু প্রয়োজন নেই: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় গরু চুরির হিড়িক

শাহাদত হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ১১:২৭:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছবি:সংগৃহীত
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দুই উপজেলায় কৃষক ও খামারির ২৩টি গরু চুরি হয়েছে। প্রতি রাতেই সংঘবদ্ধ চোরের দল কোনো না কোনো কৃষক ও খামারির বাড়িতে হানা দিচ্ছেন। এতে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গরু রক্ষার জন্য কেউ কেউ গোয়াল ঘরেই রাত পার করছেন। প্রতি রাতে গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের তৎপরতা নেই বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিরা। থানায় অভিযোগ দিয়েও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার ও গরু উদ্ধারে মিলছে না কোনো প্রতিকার।

বুধবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখারচালা (শরীফ বাজার) গ্রামের ইউসুফ আলী প্রধানের বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল কেয়ারটেকার ও তার স্ত্রীর মুখে চেতনা-নাশক ছিটিয়ে কোরবানির একটি ষাঁড়সহ পাঁচটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কিছু লাভের আশায় কেউ ২-৪টি আবার অনেকে বেশি করে গরু লালন পালন করেছেন। সম্প্রতি গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। প্রতি রাতেই কারো না কারো বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশ বলছে তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। প্রতি রাকেই পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় পাহারা দিচ্ছে।
মুঠোফোনে ইউসুফ আলী প্রধান বলেন, তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। বাড়িতে গরু লালন-পালনের জন্য কেয়ারটেকার কুরবান আলী দেখাশুনা করেন। কেয়ারটেকার ও তার স্ত্রী গোয়াল ঘরের পাশের কক্ষে থাকেন। তাদের ছেলে হামিদুল ইসলাম বাড়ির মালিকের অপর একটি ঘরে থাকেন। দুটি ষাঁড়, একটি গাভী ও দুটি বাছুর চুরি হয়। কোরবানির উদ্দেশে পাশের কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ বাজার থেকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছিলেন ইউসুফ আলী। চুরি হওয়া পাঁচটি গরুর আনুমানিক মূল্য সাড়ে ছয় লাখ টাকা।

কেয়ারটেকার কুরবান আলীর জানান, ঘটনার রাতে বাহিরে শব্দ পেয়ে ঘর থেকে দা হাতে বেরিয়ে আসেন তার স্ত্রী। দুই-তিনজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের মধ্য থেকে একজন তার স্ত্রীর মুখে চেতনা-নাশক ছিটিয়ে দিলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি (কুরবান আলী) বাহিরে এলে চোরের দলের সদস্যরা তার মুখেও চেতনা-নাশক ছিটিয়ে দিলে তিনিও হারিয়ে ফেলেন। তাদের ছেলে হামিদুল ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন উঠানে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন মা-বাবা। গোয়াল ঘরের দরজা খোলা দেখে এগিয়ে দেখেন পাঁচটি গরুর একটি গরুও নেই। পরে তার বাবা-মাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসার পর তাদের জ্ঞান ফেরে।

বাড়ির মালিক ইউসুফ আলী আরও বলেন, গেল ছয় মাস আগেও তার গোয়ালঘর থেকে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছিল। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার অথবা গরু উদ্ধারে করতে পারেনি। চুরি হওয়া গরু উদ্ধারে পুলিশের তেমন উৎসাহ না থাকায় কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে, বুধবার (২১ মে) ভোর রাতে শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ (সাত রাস্তা ও বহেরাতলী) এলাকায় এক রাতে তিন কৃষক আসাদ মিয়া, খোরশেদ মিয়া ও কাঞ্চন মিয়ার সাতটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে চোরের দল গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পৌরসভার লোহাগাছ (সাত রাস্তা মোড়) এলাকার কৃষক খোরশেদ মিয়ার গোয়াল ঘরের সিটকানি কেটে একটি দুধেল গাভী, একটি বকনা এবং একটি বাছুর চুরি করে নিয়ে যায়। চুরি হওয়া গরুর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। একই রাতে পাশের আসাদ মিয়ার গোয়াল ঘর থেকে একটি গর্ভবতী গাভী এবং একটি বকনা বাছুর চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া গাভী ও বকনার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। ওই রাতেই লোহাগাছ (বহেরাতুলী) এলাকার কাঞ্চন মিয়ার গোয়াল ঘরের তালা কেটে দুটি গরু চুরি করে নেয় চোরের দল। যার বাজার মূল্য ২ লাখ টাকা।

কৃষক আসাদ মিয়া বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে ঘর থেকে বরে হয়ে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখি গর্ভবতী গাভী এবং একটি বকনা বাছুর নেই। আমার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলেও সড়কে গাড়ির শব্দ পেলেও তারা চোরের গাড়ি ধরতে পারেনি।

ক্ষতিগ্রস্ত অপর কৃষক কাঞ্চন মিয়া এবং খোরশেদ মিয়ার বলেন, সঙ্ঘবদ্ধ চোরের দল গভীর রাত ৩টার পর থেকে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। পুলিশ একটু তৎপর হলেই চুরি হওয়া গরু উদ্ধার এবং সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

স্থানীয়রা বলছেন এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে গরু চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক ও খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক খামারি ও কৃষক রাত জেগে তাদের গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, কোনো খামারি বা কৃষক থানায় অভিযোগ দেয়নি। তবে পুলিশ গরু চুরির বিষয়ে শুনেছে। আমরা নিজ ইচ্ছা থেকেই গরু চুরি রোধে টহল বাড়িয়েছি এবং কয়েকজন চোরের নাম ঠিকানা আছে আমাদের কাছে। তাদের ধরতে পারলেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং খামারিরা অভিযোগ না দিলেও আমি তাদের বাসায় গিয়ে মামলা নিয়ে নেব।

এদিকে, বুধবার (২৮ মে) রাতে কাপাসিয়া উপজেলার রাউতকোনা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলামের গোয়াল ঘর থেকে তিনটি গাভী চুরি হইছে। চুরি হওয়া গাভী থেকে তিনি ১৫ লিটার দুধ বিক্রি করতে পারতেন। সোমবার (২৬ মে) উপজেলার কপালেশ্বর গ্রামের কৃষক আলম মিয়ার ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাঁড়, নুরুল ইসলামের দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভী এবং বিল্লাল মিয়ার গোয়াল ঘরে থেকে তিন লাখ টাকা মূল্যের ২টি গাভী চুরি হয়ে যায়।

একই রাতে উপজেলার বামনখলা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম সিকদারের গোয়াল ঘর থেকে ২টি গাভী, পাশের নবীপুর গ্রামের ছলিম উদ্দিনের গোয়াল ঘর থেকে ২টি গরু, মঙ্গলবার (২৭ মে) কান্দানিয়া গ্রামের মনো মিয়ার গোয়াল ঘর থেকে দুই লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু চুরি হয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিল্লাল মিয়া ও নুরুল ইসলাম বলেন, গভীর রাত ২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে এসব চুরি সংঘটিত হয়। চুরির ঘটনায় মামলা করিনি। উপজেলার পাবুর গ্রামের খামারি শাকিল হাসান মোড়ল বলেন, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু চুরি বেড়েছে। আমার খামারে ১০ লাখ টাকা মূল্যের গরু নিয়ে আতঙ্কে রাত পার করেছি।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, গরু চুরির বিষয়ে আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমেই জানলাম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দিনের বেলায় কাপাসিয়া থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা ৫ গরু চোরকে হাতেনাতে আটক করে। আটককৃত পাঁচ জনকে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় গরু চুরির হিড়িক

আপডেট সময় : ১১:২৭:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

ছবি:সংগৃহীত
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দুই উপজেলায় কৃষক ও খামারির ২৩টি গরু চুরি হয়েছে। প্রতি রাতেই সংঘবদ্ধ চোরের দল কোনো না কোনো কৃষক ও খামারির বাড়িতে হানা দিচ্ছেন। এতে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গরু রক্ষার জন্য কেউ কেউ গোয়াল ঘরেই রাত পার করছেন। প্রতি রাতে গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের তৎপরতা নেই বলে দাবি করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিরা। থানায় অভিযোগ দিয়েও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার ও গরু উদ্ধারে মিলছে না কোনো প্রতিকার।

বুধবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখারচালা (শরীফ বাজার) গ্রামের ইউসুফ আলী প্রধানের বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল কেয়ারটেকার ও তার স্ত্রীর মুখে চেতনা-নাশক ছিটিয়ে কোরবানির একটি ষাঁড়সহ পাঁচটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কিছু লাভের আশায় কেউ ২-৪টি আবার অনেকে বেশি করে গরু লালন পালন করেছেন। সম্প্রতি গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। প্রতি রাতেই কারো না কারো বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে পুলিশ বলছে তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। প্রতি রাকেই পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় পাহারা দিচ্ছে।
মুঠোফোনে ইউসুফ আলী প্রধান বলেন, তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। বাড়িতে গরু লালন-পালনের জন্য কেয়ারটেকার কুরবান আলী দেখাশুনা করেন। কেয়ারটেকার ও তার স্ত্রী গোয়াল ঘরের পাশের কক্ষে থাকেন। তাদের ছেলে হামিদুল ইসলাম বাড়ির মালিকের অপর একটি ঘরে থাকেন। দুটি ষাঁড়, একটি গাভী ও দুটি বাছুর চুরি হয়। কোরবানির উদ্দেশে পাশের কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ বাজার থেকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছিলেন ইউসুফ আলী। চুরি হওয়া পাঁচটি গরুর আনুমানিক মূল্য সাড়ে ছয় লাখ টাকা।

কেয়ারটেকার কুরবান আলীর জানান, ঘটনার রাতে বাহিরে শব্দ পেয়ে ঘর থেকে দা হাতে বেরিয়ে আসেন তার স্ত্রী। দুই-তিনজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পান। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের মধ্য থেকে একজন তার স্ত্রীর মুখে চেতনা-নাশক ছিটিয়ে দিলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি (কুরবান আলী) বাহিরে এলে চোরের দলের সদস্যরা তার মুখেও চেতনা-নাশক ছিটিয়ে দিলে তিনিও হারিয়ে ফেলেন। তাদের ছেলে হামিদুল ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন উঠানে অচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন মা-বাবা। গোয়াল ঘরের দরজা খোলা দেখে এগিয়ে দেখেন পাঁচটি গরুর একটি গরুও নেই। পরে তার বাবা-মাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসার পর তাদের জ্ঞান ফেরে।

বাড়ির মালিক ইউসুফ আলী আরও বলেন, গেল ছয় মাস আগেও তার গোয়ালঘর থেকে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছিল। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার অথবা গরু উদ্ধারে করতে পারেনি। চুরি হওয়া গরু উদ্ধারে পুলিশের তেমন উৎসাহ না থাকায় কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে, বুধবার (২১ মে) ভোর রাতে শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ (সাত রাস্তা ও বহেরাতলী) এলাকায় এক রাতে তিন কৃষক আসাদ মিয়া, খোরশেদ মিয়া ও কাঞ্চন মিয়ার সাতটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে চোরের দল গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পৌরসভার লোহাগাছ (সাত রাস্তা মোড়) এলাকার কৃষক খোরশেদ মিয়ার গোয়াল ঘরের সিটকানি কেটে একটি দুধেল গাভী, একটি বকনা এবং একটি বাছুর চুরি করে নিয়ে যায়। চুরি হওয়া গরুর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। একই রাতে পাশের আসাদ মিয়ার গোয়াল ঘর থেকে একটি গর্ভবতী গাভী এবং একটি বকনা বাছুর চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া গাভী ও বকনার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। ওই রাতেই লোহাগাছ (বহেরাতুলী) এলাকার কাঞ্চন মিয়ার গোয়াল ঘরের তালা কেটে দুটি গরু চুরি করে নেয় চোরের দল। যার বাজার মূল্য ২ লাখ টাকা।

কৃষক আসাদ মিয়া বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে ঘর থেকে বরে হয়ে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখি গর্ভবতী গাভী এবং একটি বকনা বাছুর নেই। আমার ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলেও সড়কে গাড়ির শব্দ পেলেও তারা চোরের গাড়ি ধরতে পারেনি।

ক্ষতিগ্রস্ত অপর কৃষক কাঞ্চন মিয়া এবং খোরশেদ মিয়ার বলেন, সঙ্ঘবদ্ধ চোরের দল গভীর রাত ৩টার পর থেকে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। পুলিশ একটু তৎপর হলেই চুরি হওয়া গরু উদ্ধার এবং সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

স্থানীয়রা বলছেন এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে গরু চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক ও খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক খামারি ও কৃষক রাত জেগে তাদের গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, কোনো খামারি বা কৃষক থানায় অভিযোগ দেয়নি। তবে পুলিশ গরু চুরির বিষয়ে শুনেছে। আমরা নিজ ইচ্ছা থেকেই গরু চুরি রোধে টহল বাড়িয়েছি এবং কয়েকজন চোরের নাম ঠিকানা আছে আমাদের কাছে। তাদের ধরতে পারলেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং খামারিরা অভিযোগ না দিলেও আমি তাদের বাসায় গিয়ে মামলা নিয়ে নেব।

এদিকে, বুধবার (২৮ মে) রাতে কাপাসিয়া উপজেলার রাউতকোনা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলামের গোয়াল ঘর থেকে তিনটি গাভী চুরি হইছে। চুরি হওয়া গাভী থেকে তিনি ১৫ লিটার দুধ বিক্রি করতে পারতেন। সোমবার (২৬ মে) উপজেলার কপালেশ্বর গ্রামের কৃষক আলম মিয়ার ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাঁড়, নুরুল ইসলামের দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভী এবং বিল্লাল মিয়ার গোয়াল ঘরে থেকে তিন লাখ টাকা মূল্যের ২টি গাভী চুরি হয়ে যায়।

একই রাতে উপজেলার বামনখলা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম সিকদারের গোয়াল ঘর থেকে ২টি গাভী, পাশের নবীপুর গ্রামের ছলিম উদ্দিনের গোয়াল ঘর থেকে ২টি গরু, মঙ্গলবার (২৭ মে) কান্দানিয়া গ্রামের মনো মিয়ার গোয়াল ঘর থেকে দুই লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু চুরি হয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিল্লাল মিয়া ও নুরুল ইসলাম বলেন, গভীর রাত ২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে এসব চুরি সংঘটিত হয়। চুরির ঘটনায় মামলা করিনি। উপজেলার পাবুর গ্রামের খামারি শাকিল হাসান মোড়ল বলেন, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরু চুরি বেড়েছে। আমার খামারে ১০ লাখ টাকা মূল্যের গরু নিয়ে আতঙ্কে রাত পার করেছি।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, গরু চুরির বিষয়ে আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমেই জানলাম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দিনের বেলায় কাপাসিয়া থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা ৫ গরু চোরকে হাতেনাতে আটক করে। আটককৃত পাঁচ জনকে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।