সংবাদ শিরোনাম ::
পঞ্চগড়ের সীমান্ত দিয়ে ১২ বাংলাদেশি ও ৪ ভারতীয় নাগরিকসহ ১৬ জনকে পুশইন ক্ষমতায় গেলে ড. ইউনূসকে পাশে চাইবে বিএনপি যশোরের বেনাপোলে গাছে ঝুলছিল স্বামীর মরদেহ, স্ত্রীর লাশ পড়েছিল মাঠে হানিফ পরিবহনের বাস ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত দুর্গম পাহাড়ে নারী পর্যটকের মৃত্যু, ভ্রমণ গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জে যুবককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা ইরানের ভয়ে একরাতে ৫ বার বাংকারে আশ্রয় নেন রাষ্ট্রদূত মাইক পাঁচ দিন অনশনের পর অবশেষে বিয়ে হলো রাদিয়া-বিজয়ের ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক আজ
সংবাদ শিরোনাম ::
পঞ্চগড়ের সীমান্ত দিয়ে ১২ বাংলাদেশি ও ৪ ভারতীয় নাগরিকসহ ১৬ জনকে পুশইন ক্ষমতায় গেলে ড. ইউনূসকে পাশে চাইবে বিএনপি যশোরের বেনাপোলে গাছে ঝুলছিল স্বামীর মরদেহ, স্ত্রীর লাশ পড়েছিল মাঠে হানিফ পরিবহনের বাস ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত দুর্গম পাহাড়ে নারী পর্যটকের মৃত্যু, ভ্রমণ গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার নারায়ণগঞ্জে যুবককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা ইরানের ভয়ে একরাতে ৫ বার বাংকারে আশ্রয় নেন রাষ্ট্রদূত মাইক পাঁচ দিন অনশনের পর অবশেষে বিয়ে হলো রাদিয়া-বিজয়ের ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক আজ

একাধারে ৪২ বছর রোজা পালন দিনমজুর ইনছান আলী এবার হজে যাচ্ছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক কুড়িগ্রাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪০:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ২১৬ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সন্ধানে মিডিয়া লিঃ সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কুড়িগ্রামে ৪২ বছর রোজা পালন দিনমজুর ইনছান আলী। ছবি:সংগৃহীত

 

 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম ইনছান আলীর। বর্তমানে তার বয়স ৮২ বছর। অভাব অনটনের সংসারে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না বাবা নছর উদ্দিন মুন্সি। ছেলে প্রাইমারীর গন্ডি পেরুতে না পেরুতে বন্ধ করে দেন পড়ালেখা। তবে নছর মুন্সি ছিলেন ধর্মানুরাগী। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে মাওলানা হবে।

তাই ছেলে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য তাবলীগ জামাতে পাঁচ বছরের চিল্লাতে পাঠিয়ে দেন। তাবলীগ জামাতের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ বছর কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন ইনছান আলী। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি একটানা রোজা রাখতে শুরু করেন। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় ৪২ বছর। বছরে শুধু মাত্র পাঁচ দিন বাদে সারা বছরেই পালন করেছেন রোজা।

হতদরিদ্র পরিবার জন্ম নেয়া ইনছান আলী খোদার কাছে চাইতেন খোদা তাআলা যেন তাঁকে হজ করার তৌফিক দেন। চাওয়ার মতো চাইলে খোদাতালার যে নিরাশ করেন না হয়তো তারই দৃষ্টান্ত ইনছান আলী। হজের খরচ বহনে নিজের সাধ্য না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সহযোগিতায় ১০ জুন তারিখে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি।

একাধারে ৪২ বছর রোজা পালন ও হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইনছান আলী বলেন, গরীব ঘরে জন্ম আমার। পৈতৃক সূত্রে ১৪ শতাংশের বাড়ি ভিটা ও সামান্য কিছু ফসলি জমি ছাড়া আমার আর সম্পদ বলতে কিছুই নাই। অভাব অনটনের মাঝেও আমি কখনো রোজা ছেড়ে দেইনি। রোজা রাখতে গিয়ে প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হতো। বাড়ির লোকজনো কিছুটা অসুবিধে বোধ করত। পরে অবশ্য খোদার রহমতে সব ঠিক হয়ে গেছে। আমার ৬ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে মারা গেছে। বাকি ৪ ছেলে সবাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। তবে অভাব দূর হয়নি। ছেলেরা দিনমজুরি করে যা আয় রোজগার করে তা থেকে আমাকে কিছু দেয়। তাই দিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়।

অভাবের সংসারে রোজা রাখাও অনেক সময় কষ্টের হয়। কতদিন যে শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছি। সেহরিতে খাবার না থাকায় মুড়ি, চিড়া কখনো কচু গাছ সেদ্ধ করে খেয়ে রোজা রেখেছি। যত কষ্টই হোক রোজা কিন্তু ছাড়িনি। ইফতারে কখনো চকলেট কখনো শুধু পানি কখনো আবার গাছের পাতা চিবিয়ে ইফতার করতাম। খোদার কাছে চোখের পানি ছেড়ে বলতাম খোদা আমাকে যতদিন হায়াত দিয়েছেন আমি যেন ততদিন রোজা রাখতে পারি।

ইফতার করে নামাজ আদায় করে খোদাকে বলতাম খোদা যেন আমাকে হজ্ব করার তৌফিক দেন। আমার নিজের তো হজ্বের খরচ জোগানোর ক্ষমতা নাই। ছেলেরা যে আমাকে হজ্বে পাঠাবে তাদেরও সাধ্য নাই। তাদেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবু হতাশ না হয়ে খোদার কাছেই চাইতাম। মহান আল্লাহ আমার হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছাকে কবুল করেছেন। তাঁর অসীম কুদরতে আমার হজ্বে যাওয়ার উছিলা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে পাঠিয়েছেন। ওই স্যারের সহযোগিতায় আগামী মাসের ১০ তারিখ পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিব ইনশাআল্লাহ। যে মানুষটি আমার হজ্বের যাবতীয় খরচ বহন করে আমার হজ্বে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন আমি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করি আল্লাহ তাঁকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

ইনছান আলীর প্রতিবেশি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ইনছান আলী চাচা প্রতিদিনই রোজা রাখেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। চাচা দেখা হলেই হজ্বে যাওয়ার কথা বলতেন। আল্লাহ ওনার নিয়ত কবুল করেছেন।

স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে থেকেও ইনছান আলী কখনও ধর্মবিমূখ হননি। টানা প্রায় ৪২ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন। তাঁর হজ্বে যাওয়ার জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন আমরা এলাকাবাসী তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাঁকেও বেহেশত নসিব করে সে কামনা করছি।

বিভি/এজেড

নিউজটি শেয়ার করুন

একাধারে ৪২ বছর রোজা পালন দিনমজুর ইনছান আলী এবার হজে যাচ্ছেন।

আপডেট সময় : ১০:৪০:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

কুড়িগ্রামে ৪২ বছর রোজা পালন দিনমজুর ইনছান আলী। ছবি:সংগৃহীত

 

 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম ইনছান আলীর। বর্তমানে তার বয়স ৮২ বছর। অভাব অনটনের সংসারে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না বাবা নছর উদ্দিন মুন্সি। ছেলে প্রাইমারীর গন্ডি পেরুতে না পেরুতে বন্ধ করে দেন পড়ালেখা। তবে নছর মুন্সি ছিলেন ধর্মানুরাগী। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে মাওলানা হবে।

তাই ছেলে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য তাবলীগ জামাতে পাঁচ বছরের চিল্লাতে পাঠিয়ে দেন। তাবলীগ জামাতের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ বছর কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন ইনছান আলী। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি একটানা রোজা রাখতে শুরু করেন। এভাবেই কেটে গেছে প্রায় ৪২ বছর। বছরে শুধু মাত্র পাঁচ দিন বাদে সারা বছরেই পালন করেছেন রোজা।

হতদরিদ্র পরিবার জন্ম নেয়া ইনছান আলী খোদার কাছে চাইতেন খোদা তাআলা যেন তাঁকে হজ করার তৌফিক দেন। চাওয়ার মতো চাইলে খোদাতালার যে নিরাশ করেন না হয়তো তারই দৃষ্টান্ত ইনছান আলী। হজের খরচ বহনে নিজের সাধ্য না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সহযোগিতায় ১০ জুন তারিখে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি।

একাধারে ৪২ বছর রোজা পালন ও হজ্বে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইনছান আলী বলেন, গরীব ঘরে জন্ম আমার। পৈতৃক সূত্রে ১৪ শতাংশের বাড়ি ভিটা ও সামান্য কিছু ফসলি জমি ছাড়া আমার আর সম্পদ বলতে কিছুই নাই। অভাব অনটনের মাঝেও আমি কখনো রোজা ছেড়ে দেইনি। রোজা রাখতে গিয়ে প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হতো। বাড়ির লোকজনো কিছুটা অসুবিধে বোধ করত। পরে অবশ্য খোদার রহমতে সব ঠিক হয়ে গেছে। আমার ৬ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে মারা গেছে। বাকি ৪ ছেলে সবাই বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। তবে অভাব দূর হয়নি। ছেলেরা দিনমজুরি করে যা আয় রোজগার করে তা থেকে আমাকে কিছু দেয়। তাই দিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়।

অভাবের সংসারে রোজা রাখাও অনেক সময় কষ্টের হয়। কতদিন যে শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছি। সেহরিতে খাবার না থাকায় মুড়ি, চিড়া কখনো কচু গাছ সেদ্ধ করে খেয়ে রোজা রেখেছি। যত কষ্টই হোক রোজা কিন্তু ছাড়িনি। ইফতারে কখনো চকলেট কখনো শুধু পানি কখনো আবার গাছের পাতা চিবিয়ে ইফতার করতাম। খোদার কাছে চোখের পানি ছেড়ে বলতাম খোদা আমাকে যতদিন হায়াত দিয়েছেন আমি যেন ততদিন রোজা রাখতে পারি।

ইফতার করে নামাজ আদায় করে খোদাকে বলতাম খোদা যেন আমাকে হজ্ব করার তৌফিক দেন। আমার নিজের তো হজ্বের খরচ জোগানোর ক্ষমতা নাই। ছেলেরা যে আমাকে হজ্বে পাঠাবে তাদেরও সাধ্য নাই। তাদেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবু হতাশ না হয়ে খোদার কাছেই চাইতাম। মহান আল্লাহ আমার হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছাকে কবুল করেছেন। তাঁর অসীম কুদরতে আমার হজ্বে যাওয়ার উছিলা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে পাঠিয়েছেন। ওই স্যারের সহযোগিতায় আগামী মাসের ১০ তারিখ পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিব ইনশাআল্লাহ। যে মানুষটি আমার হজ্বের যাবতীয় খরচ বহন করে আমার হজ্বে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন আমি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করি আল্লাহ তাঁকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

ইনছান আলীর প্রতিবেশি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ইনছান আলী চাচা প্রতিদিনই রোজা রাখেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। চাচা দেখা হলেই হজ্বে যাওয়ার কথা বলতেন। আল্লাহ ওনার নিয়ত কবুল করেছেন।

স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে থেকেও ইনছান আলী কখনও ধর্মবিমূখ হননি। টানা প্রায় ৪২ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন। তাঁর হজ্বে যাওয়ার জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন আমরা এলাকাবাসী তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাঁকেও বেহেশত নসিব করে সে কামনা করছি।

বিভি/এজেড