ছবি:সংগৃহীত
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি লোহা মিশ্রিত রৌপ্য মিশ্রিত লোহা দিয়ে তৈরি আংটি পরিধান করতেন। ওই আংটি তিনি পরতেন বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে। পুরুষরা আংটি পরিধান করলে তা কনিষ্ঠ আঙুলে পরা উত্তম। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেছেন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আঙুলে আংটি পরতেন; এ কথা বলে তিনি বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের দিকে ইশারা করেন। (সহিহ মুসলিম)।
আরকটি বর্ণনায় এসেছে, লোকেরা আনাসকে (রা.) আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আংটির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে, তিনি বললেন, আমি যেন এখনও তাঁর রূপার তৈরি আংটির উজ্জ্বল্য অবলোকন করছি। এ কথা বলে তিনি তাঁর বাম হাতের কনিষ্ঠ অঙুল ওঠালেন। (সুনানে নাসাঈ)
পুরুষদের জন্য তর্জনি বা মধ্যমা আঙুলে আংটি পরিধান করা অনুত্তম। আলী (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তর্জনি ও মধ্যমা আঙুলে আংটি পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি)।
পুরুষরা কি যে কোনো ধাতুর আংটি ব্যবহার করতে পারবেন?
রাসুল (সা.) রুপার আংটি পরতেন। পুরুষদের জন্য রৌপ্য ছাড়া অন্যান্য ধাতুর আংটি পরিধান করা তিনি অপছন্দ করেছেন বলে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহ.) থেকে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত একদিন এক ব্যক্তি পিতলের আংটি পরিধান করে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এলে তিনি তাকে বলেন, আমি আপনার কাছ থেকে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি কেন? এ কথা শুনে লোকটি আংটিটি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি একটি লোহার আংটি পরে এলে তিনি বলেন, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের অধিবাসীদের অলংকার দেখছি কেন? লোকটি ওই আংটিও ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে কিসের আংটি ব্যবহার করবো? তিনি বললেন, রৌপ্যের আংটি ব্যবহার করুন, তবে তা যেন এক মিসকালের (চার গ্রাম) চেয়ে বেশি ওজনের না হয়। (সুনানে আবু দাউদ)
তাই পুরুষরা আংটি ব্যবহার করতে চাইলে চার গ্রামের কম ওজনের রুপার আংটি ব্যবহার করবে। রুপা ছাড়া অন্যান্য ধাতু যেমন স্বর্ণ, হীরা, লোহা, পিতল ইত্যাদি ধাতুর আংটি ব্যবহার করা থেকে পুরুষরা বিরত থাকবে।
ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আংটি ব্যবহার করা হারাম অনেকে বিভিন্ন ধাতু বা পাথরের অলৌকিক ক্ষমতা, প্রভাবে বিশ্বাস করেন এবং এই বিশ্বাস থেকে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এসব ধাতু বা পাথরের আংটি ব্যবহার করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এ রকম বিশ্বাস শিরক ও মহাপাপ গণ্য হয়। কোনো ইমানদার ব্যক্তি নির্জীব পাথর বা কোনো ধাতুর ক্ষমতায় বিশ্বাস করতে পারে না। পাথরকে ভালো-মন্দের মালিক বলে বিশ্বাস করতে পারে না।
খারাপ অবস্থা বা ভাগ্যের পরিবর্তন চাইলে সেজন্য নিজে যথাসাধ্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে। সদকা ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে এবং দোয়া করতে হবে যেমন ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে। কোনো পাথরের অলৌকিক প্রভাবে ভাগ্য ভালো হয়ে যাবে বা মন্দ হয়ে যাবে এ রকম অযৌক্তিক শিরকি বিশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।
শিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপ। কোরআনে শিরককে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জুলুম বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আয়াতে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরক ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন,
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ
وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤی اِثْمًا عَظِیْمًا.
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে এক মহাপাপ করে। (সুরা নিসা : ৪৮)
শিরক যারা করবে, তাদের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ.
আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সুরা মায়েদা: ৭২)
তাই আমাদের কাজে বা বিশ্বাসে কোনোভাবেই যেন শিরক স্থান না পায় এ ব্যাপারে খুব সাবধান থাকা কর্তব্য।